তথ্য ও প্রযুক্তির মশাল জ্বলে উঠুক হাতে হাতে

গর্ভাবস্থায় বিভিন্ন জটিলতা ও প্রতিকার






মা হওয়ার আগে শারীরিক এবং মানসিক ভাবে প্রস্তুতির বিশেষ প্রয়োজন আছে। প্রাপ্ত বয়স্ক একজন নারী যখন মা হওয়ার জন্য মানসিকভাবে প্রস্তুত হবেন তখনই তার সন্তানধারণ করা উচিত। কখনোই তার আগে নয়। এর আগে সন্তান ধারণ করলে গর্ভকালীন সময়ে বিভিন্ন জটিলতা দেখা দেয় ৷ তবে মানসিক ভাবে প্রস্তুত থাকলে জটিলতা হবে না তা কিন্তু নয় ৷ এতে জটিলতা হলে কম হবে বা হলেও প্রতিরোধ করা সহজ হবে ৷ কিন্তু আগে থেকেই সতর্ক না থাকলে জটিলতা বেশি হবে আর তাতে বাচ্চা এবং মা দুজনের প্রাণ নাশের আসঙ্কা থাকে ৷ যাই হোক নিচে গর্ভকালীন কিছু জটিলতার কথা উল্লেখ করা হলো।

রক্ত স্বল্পতা, জন্ডিস, খিঁচুনি, পা ফুলে যাওয়া, উচ্চ রক্তচাপ, অতিরিক্ত বমি হওয়া, পেটে ব্যথা, বিশেষ করে তলপেটে ব্যথা ও শ্বাসকষ্ট হওয়া। প্রায়ই জ্বর হওয়া, ডায়াবেটিস ধরা পড়া বা রক্তে সুগার পাওয়া ৷ প্রস্রাবের সময় জ্বালাপোড়া হওয়া, প্রস্রাবের পরিমাণ কমে যাওয়া বা একেবারেই বন্ধ হয়ে যাওয়া ৷ দিন বেশি হচ্ছে কিন্তু তলপেটের আকার বাড়ছে না ৷ যোনিপথে রক্ত ক্ষরণ, রক্তস্রাব, দুর্গন্ধযুক্ত স্রাব ৷ জরায়ুর ভিতরে সন্তানে চড়াচড়া অনুভব করতে না পারা ইত্যাদি ৷


গর্ভকালীন কিছু সাধারণ সমস্যাঃ
প্রিএক্লামশিয়াঃ এটি একটি অন্যতম জটিলতা। এক্ষেত্রে মায়ের মৃত্যু পর্যন্ত হতে পারে। উচ্চ রক্তচাপ, প্রস্রাবে প্রোটিন, উপরের পেটে ব্যথা, বমি হওয়া, মাথা ব্যথা ইত্যাদি দৃশ্যত বেশ কিছু জটিলতা এসময় তৈরি হয়।

এক্লামশিয়াঃ গর্ভফুল বা প্লাসেন্টার কিছু সমস্যা এবং রক্ত সরবরাহের ঘাটতির কারণে দেখা দেয় এক্লামশিয়া ৷ গর্ভধারণের ২০ সপ্তাহ পরে যেসব রোগীর উচ্চ রক্তচাপ দেখা দেয় অথবা আগে থেকেই যারা উচ্চ রক্তচাপের রোগী তাদের ক্ষেত্রে একলামশিয়ার ঝুঁকি বেশি থাকে। পূর্ব লক্ষণ হিসেবে গর্ভবতী নারীর উচ্চ রক্তচাপ, মুখ, হাত ও পায়ে প্রচুর পানি আসা, প্রস্রাবের পরিমাণ কমে যাওয়া, প্রাস্রাবের সাথে প্রোটিন যাওয়া, তীব্র মাথাব্যথা ও সেই সঙ্গে ঝাপসা দেখা, পেটের ওপরের দিকে ব্যথা অনুভূত হওয়া ইত্যাদি দেখা যায়। এসব লক্ষণের সাথে যদি খিচুনি আসে তাহলে এক্লামশিয়া হয়েছে নিশ্চিত ৷

প্লাসেন্টা সমস্যাঃ গর্ভাবস্থায় সাধারণত: এর কোন লক্ষণ দেখা যায় না। একমাত্র স্ক্যানিংয়ের মাধ্যমেই এটা ডায়াগনোসিস করা সম্ভব হয়। তবে যোনিপথে রক্তক্ষরণ হলে সনাক্ত করা সম্ভব হয়। গর্ভফুল সাধারণত আংশিক বা পুরোপুরি ঢেকে ফেলে জরায়ুর মুখকে।

প্রসবকালীন সময়ঃ প্রসব ব্যথা শুরুর পর জরায়ুর মুখ যখন খুলে যায়, তখন গর্ভফুল ক্রমেই সরে আসতে থাকে গর্ভাশয়ের দেয়াল থেকে। এসময়টা তাদের জন্য বেশি ঝুঁকিপূর্ণ যারা অধিক সন্তান জন্ম দিয়েছেন, জরায়ুতে এর আগে অপারেশন করা হয়েছে অথবা আগের সন্তান যদি সিজারিয়ান-এর মাধ্যমে হয়ে থাকে।

হরমোনের প্রভাবঃ গর্ভাবস্থায় রিলাক্সিন হরমোন হাড়ের জয়েন্টগুলোকে অনেকটাই শিথিল করে দেয়। কিন্তু এটা যদি বেশি পরিমাণে হয়, তখন তা ব্যথার কারণ হয়ে দাঁড়ায়। আর একারনেই কোমরের জয়েন্টের ওপরে ব্যথা, পিউবিক হাড় এবং পিঠের নিচে ব্যথা হয়ে থাকে। গর্ভাবস্থায় যে কোনো সময়ে ব্যথা হতে পারে। তবে প্রথম তিন মাসের পর এটি হতে দেখা যায়।

গর্ভাবস্থায় চুলকানিঃ অনেকের গর্ভাবস্থায় হাতে-পায়ে চুলকানি হতে পারে। এটা সাধারণত যকৃতের সমস্যার কারণে হয়ে থাকে। এটা যে কারও হতে পারে। তবে পরিবারের মা বা বোনের এরকম ইতিহাস থাকলে এটা হওয়া খুবই স্বাভাবিক।

গর্ভাবস্থায় মায়ের ওজনঃ এটি একটি অন্যতম বিবেচ্য বিষয়। নির্দিষ্ট অনুপাতে ওজন না বাড়লে সন্তানের স্বাভাবিক বৃদ্ধি ব্যহত হওয়া বা মায়ের সঠিক পুষ্টির অভাব ধরে নিতে হবে । আর এরকম হলে মাকে প্রয়োজনীয় সুষম খাবার খাওয়া একান্ত আবশ্যক। একজন নারীর স্বাভাবিক অবস্থায় যে পরিমাণ সুষম খাবার প্রয়োজন, কিন্তু যখন সন্তান ধারণ করেন তখন তার চাহিদা আরও অনেক বেড়ে যায়।
গর্ভবতী নারীর অতিরিক্ত খাবার প্রয়োজন হয় প্রধানত: দুটি কারণে। যথা:-
১) নিজের স্বাস্থ্য ঠিক রাখতে, অর্থ্যাৎ আসন্ন সন্তান প্রসবের জন্য নিজেকে তৈরি করতে।
২) গর্ভস্থ ভ্রুণের গঠন ও দৈহিক বৃদ্ধি ঠিক রাখতে। মা যদি খাবার কম খান তাহলে সন্তানের ওজন বাড়বে না, প্রয়োজনীয় পুষ্টি থেকে বঞ্চিত হবে। শেষ পর্যন্ত একটি অপরিণত শিশুর জন্ম হবে।


কি কি কারণে গর্ভধারণ ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে ওঠে ?

* ১৮ বছর বয়স না হতেই গর্ভধারণ
* ৩০ বছরের পর প্রথম সন্তান নেয়া
* ৪০ বছরের পর সন্তান ধারণ করা
* চতুর্থ সন্তানের পর আবারও সন্তান ধারণ
* আগের গর্ভের সময় জটিলতা হওয়া
* অস্ত্রোপাচারের পর নির্দিষ্ট সময় পার না হতেই আবার গর্ভধারণ করা।
* মেয়েদের উচ্চতা কম হলে, তুলনামূলক বেঁটে বা খাটো মেয়েদের গর্ভধারণ
* রক্তস্বল্পতা ও যমজ সন্তান ধারণ।


যাই হোক একটা কথা মনে রাখতে হবে, যেকোন ধরনের জটিলতা এড়াতে নিয়মিত চিকিৎসকের কাছে যাওয়ার কোন বিকল্প নেই। যেকোন কিছুই হোক না কেন, তা চেক-আপে ধরা পড়বেই। আর তাহলে চিকিৎসাও সহজ হবে। আর রোগীর মনকেও অনেক খানি প্রশান্তি দেওয়া সম্ভব হবে। সুতরাং একটি সুস্থ-সুন্দর ভবিষ্যত গড়তে মায়েদের প্রতি যত্নশীল হওয়ার কোন বিকল্প নেই।