একজন নারীর পুরো গর্ভাবস্থাকে তিন ভাগে ভাগ করা হয়েছে ৷ প্রথম তিন মাস বা first trimester , মাঝের তিন মাস বা second trimester ও শেষের তিন মাস বা third trimester ৷ আর এই তিন পর্যায়ের যে কোনো সময় রক্তক্ষরণ হতে পারে।
তাই আজকের আলোচনায় থাকছে গর্ভাবস্থায় রক্তক্ষরণের কারণ ও করনীয় সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা ৷
প্রথম তিন মাসে রক্তক্ষরণের কারণঃ
* শতকরা ২০-৩০ ভাগ গর্ভবতীর প্রথম তিন মাসে হালকা রক্তক্ষরণ হতে পারে। এর মধ্যে অর্ধেক বাচ্চার কোনো সমস্যা হয় না ৷ ফলে বাচ্চার কোন রকম সমস্যা ছাড়াই অনেক মহিলা সন্তান প্রসব করে থাকেন ৷
* বাচ্চা নষ্ট হয়ে যাওয়ার আশঙ্কাই প্রথম তিন মাসে রক্তক্ষরণের প্রধান কারণ। অনেক সময় অল্প অল্প রক্তক্ষরণ হয় ৷ চিকিৎসা ও ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী বিশ্রামে থাকলে শেষ পর্যন্ত সন্তান প্রসব করা সম্ভব।
* একটোপিক প্রেগনেন্সিঃ
জরায়ু ছাড়া পেটের ভেতরে অন্য কোনো জায়গায় (যেমন ডিম্বনালী, ডিম্বাশয়) যদি ভ্রুণস্থাপিত হয় তবে তাকে একটোপিক প্রেগনেন্সি বলে। মাসিক বন্ধ হওয়ার পর পেটে ব্যথার সঙ্গে অল্প অল্প রক্তপাত এর প্রধান লক্ষণ। ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী কিছু পরীক্ষা-নিরীক্ষার মাধ্যমে একটোপিক প্রেগনেন্সি সনাক্ত করা যায়।
* ইমপ্লেনটেশন রক্তপাতঃ
কোনো কোনো রোগীর জরায়ুতে ভ্রুণ স্থাপিত বা ইমপ্লেনটেশনের সময় রক্তপাত হতে পারে। সাধারণত কনসেপ্টশনের ছয় থেকে ১২ দিন পর এরকম হতে পারে। অনেকে এটাকে মাসিক মনে করে ভুল করে থাকেন ৷ তাই কিছু দিন পর পরীক্ষা-নিরীক্ষার মাধ্যমে কনসেপ্টশন হয়েছে কিনা তা নিশ্চিত হওয়া যায়।
মোলার প্রেগনেন্সিঃ
যেখানে জরায়ুতে ভ্রুণের পরিবর্তে টিউমার জাতীয় সমস্যা হয় এবং এ অবস্থায় রক্তক্ষরণের সঙ্গে সঙ্গে আঙ্গুরের থোকার মতো বের হয়। জেনে রাখা ভালো, যে ভ্রুণের জন্মগত কোনো ত্রুটি থাকে সাধারণত সে সব বাচ্চাই নষ্ট বা এবরশন হয়ে যায়।
* গর্ভপাতঃ
প্রথম ট্রাইমেস্টারে পেট ব্যাথা এবং খিলধরা ভাবের সাথে রক্তপাত গর্ভপাতের লক্ষন হতে পারে বিশেষ করে প্রথম ১২ সপ্তাহে। প্রায় ৫০ ভাগ মহিলার ক্ষেত্রে যাদের প্রথম ট্রাইমেস্টারে রক্তপাত দেখা যায় তাদের গর্ভপাত হয়ে যায়। তবে যদি ৭-১১ সপ্তাহের আল্ট্রাসাউন্ডে বাচ্চার নরমাল হার্টবিট পাওয়া যায় তবে স্বাভাবিক গর্ভধারণের সম্ভাবনা ৯০% এর বেশী থাকে।
ইনফেকশনঃ
যৌনাঙ্গে ইনফেকশনের কারনেও রক্তপাত হতে পারে। ভ্যাজিনাল ইনফেকশন যেমন- ইস্ট ইনফেকশন, ব্যাকটেরিয়াল ভ্যাজাইনোসিস ইত্যাদির কারণে কিংবা যৌন বাহিত রোগের কারনেও রক্তক্ষরণ হতে পারে ৷ যৌনবাহিত রোগগুলো হচ্ছে ট্রাইকোমোনিাসিস, গনোরিয়া, ক্লামিডিয়া বা হারপিস এর কারনে যোনী পথে রক্তক্ষরণ হতে পারে।
* শারীরিক মিলনঃ গর্ভাবস্থায় নারীদের জরায়ুর দিকে বেশী পরিমাণে রক্ত প্রবাহিত হয়, তাই এই সময় শারীরিক মিলনের পর স্পটিং বা হালকা রক্তপাত হয়ে থাকে যা অস্বাভাবিক কিছু নয় । আর এজন্যই গর্ভের প্রথম তিন মাস সহবাস থেকে বিরত থাকা কর্তব্য ৷
গর্ভাবস্থার শেষের দিকে রক্তক্ষরণের কারণ
*প্রধান দুটি কারণের একটি হল গর্ভফুল বা প্লাসেন্টা নিচে জরায়ুর মুখের কাছাকাছি থাকা যাকে বলা হয় প্লাসেন্টা প্রিভিয়া, যাদের আগে জরায়ুতে কোনো ধরনের অপারেশন যেমন- ডিএন্ডসি, সিজারিয়ান অপারেশন বা যাদের যমজ বাচ্চা হয় তাদের হওয়ার আশঙ্কা বেশি থাকে।
* অন্যটি হল গর্ভফুল জরায়ুর স্বাভাবিক অবস্থা থেকে একটু আলগা হয়ে যাওয়া। ব্লাডপ্রেসার বেশি থাকা বা পেটে কোনো কারণে আঘাত পেলে এরকম হতে পারে।
* সময়ের আগেই যদি ডেলিভারির ব্যথা উঠে যায়। তাহলে অনেকেরই রক্তক্ষরণ শুরু হয়ে যায় ৷
* অনেকসময় জরায়ু মুখের কোনো সমস্যার জন্যও গর্ভাবস্থায় রক্ত যেতে পারে ৷
কি কি পরীক্ষা করা হয়?
ডাক্তার রক্তপাতের কারণ জানার জন্য বিভিন্ন ধরনের পরীক্ষা করে থাকেন যেমন-শারীরিক পরীক্ষা, আলট্রাসাউন্ড, রক্ত পরীক্ষা ইত্যাদি যাতে তিনি নিশ্চিত হতে পারেন যে গর্ভবতী মা এবং গর্ভের শিশুর সবকিছু ঠিকঠাক আছে ৷
এতে করণীয় কি ?
প্রথম দিকে অল্প রক্ত গেলে চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী বিশ্রাম ও চিকিৎসা নিলে ভ্রুণের অনেক সময় কোনো ক্ষতি হয় না। কিছু ক্ষেত্রে রক্ত যাওয়ার সঙ্গে পেটে বেশি ব্যথা থাকলে বাচ্চা নষ্ট হয়ে যাওয়ার আশঙ্কা থাকে। রক্ত বেশি গেলে সঙ্গে সঙ্গে রোগীকে হাসপাতালে নিয়ে যেতে হবে। এ অবস্থায় রোগীর রক্তের প্রয়োজন হতে পারে।