আমাদের বৃহদন্ত্র নলের মতো ফাঁপা। বৃহদন্ত্রের তিনটি অংশের মধ্যে প্রথম অংশ হচ্ছে সিকাম। এই সিকামের সাথে ছোট একটি আঙ্গুলের মত অভিক্ষেপ হল এপেনডিক্স। কোন কারণে যদি এর মধ্যে পাঁচিত খাদ্য, মল বা কৃমি ঢুকে যায়, তাহলে রক্ত ও পুষ্টির অভাব দেখা দেয়। তখন নানা ধরনের জীবাণু আক্রমণ করে ইনফেকশন বা প্রদাহের সৃষ্টি করে এবং এপেনডিক্সের ঐ অংশে বিভিন্ন ধরনের উপসর্গ দেখা দেয়। একেই বলা হয় এপেনডিসাইটিস ৷
লক্ষণ/উপসর্গঃ
পেট ব্যথাঃ প্রথমে নাভির চারপাশে ব্যথা শুরু হয় ৷ এরপরে তলপেটের একটু ডান দিকে গিয়ে ব্যথা স্থির হয়। সময়ের সাথে এই ব্যথার পরিমাণ বাড়ে। রোগির তলপেটে হাত দিলেই ব্যথা অনুভূত হয়, শক্ত অনুভূত হয়।
বমিঃ বার বার বমি বমি ভাব হয়, কিংবা বমি হতে পারে। এছাড়াও মুখে অরুচি দেখা দেয় ৷
জ্বরঃ রোগির দেহে জ্বর আসতে পারে।
পাতলা পায়খানাঃ কারো কারো ক্ষেত্রে ব্যথা শুরু হওয়ার আগে ডায়রিয়া বা পাতলা পায়খানা হয়ে থাকে ৷
অনেক সময় এপেনডিক্স ফেটে যেতে পারে তখন হঠাৎ ব্যথা কমে গিয়ে ভাল মনে হবে, কিন্তু ফ্লুইড পেটের ভেতরে অন্যান্য ফাঁকা স্থানে ছড়িয়ে পড়ে অবস্থা আগের থেকে আরো খারাপ হয়ে যাবে।
এপেনডিসাইটিস-এর জন্য পরীক্ষাঃ
রোগীকে কাশতে বলে দেখতে হবে পেটে তীব্র ব্যথা হয় কিনা। অথবা ধীরে ধীরে কুঁচকির একটু ওপরে জোরে চাপ দিন যতক্ষণ না একটু ব্যথা লাগে। তারপর চট করে হাতটা সরিয়ে নিন। তলপেটের বামদিকে সমানভাবে চাপ দিলে পেটের মধ্যে নাড়িভুঁড়ি বাঁদিক থেকে সরে ডান দিকে যায়। যদি এর ফলে ডানদিকের তলপেটে একটা প্রচন্ড তীব্র ব্যথা অনুভূত হয় তাহলে সম্ভবতঃ এপেনডিসাইটিস হয়েছে বলে বুঝতে হবে।
যদি বামদিকে কুঁচকির ওপর চাপ দিলে ডানদিকে ব্যথা না হয়, তবে ডানদিকে কুঁচকির উপর একই পরীক্ষা করবেন।
জটিলতাঃ
এপেনডেকটমি না করলে বা ব্যথা নাশক ঔষধ সেবন করে ব্যথা দমন করে রাখলে ভিতরে ভিতটে জটিলতার সৃষ্টি হয় যা আমরা সহজে বুঝে উঠতে পারিনা ৷ যার ফলে ভোগান্তি আরো বেড়ে যায় ৷ সঠিক সময়ে আলট্রাসোনোগ্রাফি করে রোগ সম্পর্কে নিশ্চিত না হলে এবং উপযুক্ত চিকিৎসা না করলে যে যে জটিলতা হয়ে থাকে ----
এপেনডিক্সে গ্যাংগ্রিন বা পঁচন ধরে
অনেক সময় অন্ত্র ছিদ্র হয়ে যায়
পেরিটোনাইটিস (পেটের আভ্যন্তরীন প্রাচীরে ইনফেকশন) হতে পারে
রোগী শকে চলে যেতে পারে
এপেনডিকুলার লাম্প হতে পারে
এমনকি মৃত্যু হতে পারে
চিকিৎসাঃ
২৪ ঘন্টার মধ্যে সার্জারি করে এপেনডিক্স কেটে ফেলতে হবে বা অপসারণ করতে হবে যা এপেনডেকটমি নামে পরিচিত ।তবে যদি সার্জারির সুযোগ ঐ মুহূর্তে না থাকে তাহলেঃ
1. মুখে কিছু না খাওয়া
2. রাইলস টিউব
3. সাকশন দেয়া
4. ব্যাথা নাশক ও সিডেশন দেয়া
5. এন্টিবায়োটিক দেয়া
6. বাওয়েল সচল রাখার ব্যবস্থা করা
উল্লেখ্য যে, পেটের নীচে ডানপাশে ব্যাথা মানেই এপেনডিসাইটিস নয়। আরও কিছু রোগে একই স্থানে ব্যাথা হতে পারে। খুব ভালো মানের আল্ট্রাসনো, রক্ত ও প্রশ্রাব এর রিপোর্ট ছাড়া এপেনডিসাইটিস রোগ নির্নয় করা সম্ভব নয়। অপ্রয়োজনীয় ক্ষেত্রে এপেনডিসাইটিস অপারেশন করা অনুচিত।