তথ্য ও প্রযুক্তির মশাল জ্বলে উঠুক হাতে হাতে

আইবিএস কি, জেনে নিন এর লক্ষণ ও প্রতিকার





অন্ত্রের সমস্যার মধ্যে ‘ইরিটেবিল বাওয়েল সিনড্রোম’ বা ‘আইবিএস’ অন্যতম। কয়েকটি লক্ষণের সমষ্টিগত প্রকাশকে ‘সিনড্রোম’ বলা হয়। এটি মূলত বৃহদান্ত্রজনিত সমস্যা। অনেক সময় একে ‘উত্তেজিত মলাশয়’ বলেও আখ্যায়িত করা হয়। এটি অন্ত্রের অন্যান্য প্রদাহজনিত রোগ যেমন- ক্ষতযুক্ত বৃহদান্ত্র (আলসারেটিভ কোলাইটিস), ক্রোন’স্ ডিজিস থেকে আলাদা। এ রোগে অন্ত্রে কোনও প্রদাহ বা কোষকলার পরিবর্তন হয় না বা ‘কলোরেকটাল ক্যান্সার’-হওয়ার আশংকা নেই। কারও কারও ক্ষেত্রে রোগের লক্ষণ তেমন কষ্টদায়ক না হলেও স্বাভাবিক জীবনযাপনে বিঘ্ন সৃষ্টি করতে পারে।


কারণঃ
সঠিক কারণ এখনও জানা সম্ভব হয়নি। দেখা গেছেএটি পরিপাকতন্ত্রের গঠনমূলক কোনও সমস্যা নয় বরং এর কার্যক্রম পরিচালনাজনিত অসুবিধা। পরিপাকতন্ত্রের সঙ্গে সংযুক্ত বিভিন্ন অঙ্গ স্বাভাবিকভাবে কাজ সম্পাদন করতে ব্যর্থ হলে এ ধরনের অসুবিধা দেখা দেয়। অন্ত্রের গায়ের মাংসল স্তর একটা নির্দিষ্ট প্রসারিত ও সংকুচিত হয়ে খাদ্যদ্রব্য পাকস্থলি থেকে বৃহদান্ত্র পর্যন্ত পৌঁছে দেয়। কিন্তু আইবিএসে আক্রান্ত হলে এ সংকোচন প্রক্রিয়া কখনও কখনও স্বাভাবিকের তুলনায় বেশি শক্তিশালী হয় ৷ ফলে খাদ্যদ্রব্য অন্ত্র থেকে অতি দ্রুত নেমে যায়। এতে পেটে গ্যাস জমে, ভারবোধ হয় এবং ডায়রিয়া দেখা দেয়। আর এর বিপরীত অবস্থা ঘটলে খাদ্যদ্রব্য অন্ত্রকে অতিক্রম করতে অনেক বেশি সময় লাগে। ফলে মল শক্ত ও শুষ্ক হয়ে ওঠে এবং কোষ্ঠকাঠিন্য দেখা দেয়।

অনেকের ধারণা এ রোগে আক্রান্তদের পরিপাকতন্ত্র বা অন্ত্রের ‘সেন্সরি নার্ভ’গুলো মস্তিষ্কের ‘সেন্সরি নার্ভ’-এ যে তথ্য প্রেরণ করে সেগুলো স্বাভাবিক নয়। এ কারণে মস্তিষ্কও ভুলভাবে তা বিশ্লেষণ করে অন্ত্রে প্রেরণ করে। ফলে অন্ত্রে অস্বাভাবিক উত্তেজনা দেখা দেয় এবং ‘আইবিএস’-এর লক্ষণগুলো প্রকাশ পায়। বিশেষ করে ‘সেরোটোনিন’-এর মাত্রার অস্বাভাবিকতা এ ক্ষেত্রে বিশেষ প্রভাব ফেলে। এছাড়া অন্ত্রে ভালো ব্যাকটেরিয়ার অভাবও এ রোগের কারণ হতে পারে। যেহেতু মহিলারা এ রোগে বেশি আক্রান্ত হয় তাই অনেক বিশেষজ্ঞের মতে হরমোনের তারতম্যও এ ক্ষেত্রে বিশেষ ভূমিকা পালন করে।

লক্ষণঃ প্রধান লক্ষণগুলো হল -
* পেটের উপরের অংশে ভারবোধ হওয়া বা গ্যাসের কারণে ফুলে ওঠা,
* অস্বস্তিকর মোচড়ানো ভাব বা ব্যথা অনুভূত হওয়া,
* কখনও কোষ্ঠকাঠিন্য কখনও ডায়রিয়া দেখা দেওয়া,
* মলে শ্লেষ্মার পরিমাণ বৃদ্ধি পাওয়া,
* সম্পূর্ণভাবে মল ত্যাগ করতে না পারার মতো একটা অসুবিধা অনুভূত হওয়া ইত্যাদি।

কখনও কখনও রোগটির প্রকাশ বেশি ঘটে আবার কখনও তা কিছুটা কমে আসে। আক্রান্তদের কারও কারও বিশেষ কিছু সূচক উত্তেজকের ভূমিকা পালন করে যেমন- কোনও খাদ্য, ওষুধ বা মানসিক চাপ।

খাদ্য : ক্যাফিনযুক্ত খাদ্য, চকলেট, দুধ, অ্যালকোহল, কোমল পানীয়, এমনকি কোনও বিশেষ ধরনের শাকসবজি বা কাঁচা ফল থেকেও অসুবিধা দেখা দিতে পারে। তবে এসব ক্ষেত্রে কোনও বিশেষ ধরনের খাদ্যের প্রতি এলার্জি আছে কিনা সে ব্যাপারে নিশ্চিত হওয়া প্রয়োজন।

মানসিক চাপ : মানসিক চাপ থেকে এ রোগের সৃষ্টি না হলেও অনেকের ক্ষেত্রেই এ সংক্রান্ত অসুবিধাগুলো মানসিক চাপ বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে বৃদ্ধি পায়।

ওষুধ : বিশেষ কোনও ওষুধ গ্রহণের ফলেও এর লক্ষণ বৃদ্ধি পেতে পারে।

রোগ নির্ণয়ঃ রোগটি নির্ণয়ের জন্য আজ পর্যন্ত নির্দিষ্ট কোনও পরীক্ষা আবিষ্কার হয়নি। তবে অন্ত্র বা পেটের কোন অঙ্গে কোনও ধরনের সমস্যা আছে কিনা তা নির্ণয় করার জন্য রক্ত পরীক্ষা, এক্স-রে, আল্ট্রাসনোগ্রাফি ছাড়াও অনেক ক্ষেত্রে ‘এনডোস্কপি’ বা ‘কোলনোস্কপি’ করা যেতে পারে। যদি পরীক্ষায় অন্ত্রের কোনও ধরনের সমস্যা ধরা না পড়ে এবং রোগী প্রায়ই এসব লক্ষণ দ্বারা আক্রান্ত হয় তখন তাকে ‘আইবিএস’-এ আক্রান্ত বলে চিহ্নিত করা হয়।

চিকিৎসাঃ বর্তমানে এক বা একাধিক ওষুধ প্রয়োগে আইবিএসের চিকিৎসা করা হয়। যদিও চিকিৎসার সাহায্যে আইবিএস থেকে সম্পূর্ণ মুক্তি লাভ করা সম্ভব নয় তবে কষ্টদায়ক অসুবিধা অনেকাংশে দূর করা সম্ভব। একেক জন রোগীর ক্ষেত্রে এক এক ধরনের ওষুধ কার্যকর হতে দেখা যায়। বেশির ভাগ ক্ষেত্রে গ্যাস নিরোধক ওষুধ প্রয়োগ করা হয়। তাছাড়া কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করার জন্য এক ধরনের ওষুধ আর ডায়রিয়া দেখা দিলে তা বন্ধের জন্য অন্য ধরনের ওষুধ গ্রয়োগ করা হয়। কখনও কখনও বিষন্নতা নিরোধক ওষুধ ব্যবহারের প্রয়োজনীয়তাও দেখা দেয়।

প্রতিরোধঃ কোনও কোনও ক্ষেত্রে জীবনযাত্রায় কিছুটা পরিবর্তন, খাদ্য গ্রহণের ক্ষেত্রে সচেতনতা এবং মানসিকভাবে চাপমুক্ত থাকতে পারলে এ রোগ থেকে কিছুটা পরিত্রাণ পাওয়া যায়। এবং প্রতিদিন ব্যায়াম করা সেই সঙ্গে মানসিক চাপ কমিয়ে আনার জন্য ‘মেডিটেশন’ করার ব্যাপারে মনোযোগী হওয়া যেতে পারে। অনেক সময় প্রচুর পানি পান করা এ রোগের লক্ষণগুলো অনেকটাই কমিয়ে আনতে সাহায্য করে।