তথ্য ও প্রযুক্তির মশাল জ্বলে উঠুক হাতে হাতে

চিকনগুনিয়া জ্বরের কারন, লক্ষণ ও প্রতিকার





চিকনগুনিয়া এক ধরনের ভাইরাস জ্বর। এডিস মশার মাধ্যমে এই রোগ ছড়ায়। চিকুনগুনিয়া ভাইরাস শরীরে প্রবেশের পরবর্তী দুই থেকে চার দিনের মধ্যে আকস্মিক জ্বর এবং অস্থিসন্ধিতে ব্যথা শুরু হয়, যা কয়েক সপ্তাহ, মাস এমনকি বছর পর্যন্ত থাকতে পারে।

রোগের লক্ষণঃ
* রোগীর প্রচণ্ড জ্বর হবে, ১০৪ থেকে ১০৫ ডিগ্রি কিংবা তারও বেশি তাপমাত্রা হতে পারে। এজ্বরে কোন কাঁপুনি বা ঘাম হয় না।
* জ্বর সাধারণত ২ থেকে ৫ দিন থাকতে পারে, এরপর এমনিতেই ভালো হয়ে যায়।
* অসহনীয় মাথাব্যথা এবং বমি বমি ভাব হতে পারে।
* শরীরের গিটে গিটে বা হাড়ের জোড়ায় জোড়ায়  ব্যথা হবে।  হাড়ের জোড় গুলি ফুলে যাবে ৷ সাধারণত এই লক্ষনটি  চিকনগুনিয়া ও ডেঙ্গুর মধ্যে প্রধান পার্থক্য ।
* চিকুনগুনিয়া জ্বরের ফলে গাঁটের ব্যাথার পাশাপাশি পেশী ব্যথার সমস্যাও দেখা যায়। অনেক সময় পেশী এতটাই শক্ত হয়ে যায় যে চলাফেরার সমস্যা শুরু হয় এবং ব্যাথা সহ্য করা অসম্ভব হয়ে পড়ে ৷
* কয়েকদিন পর শরীরে র‍্যাশ উঠবে। শরীর খুব দূর্বল হয়ে যাবে ৷
* জ্বর ২ থেকে ৩ দিনের ভেতর কমে যাবে কিন্তু এক থেকে দেড় মাস পর্যন্ত শরীর ও গিরায় ব্যথা থাকতে পারে।
* অনেকের চোখ লাল হয়ে যাওয়া বা চোখের মধ্যে ব্যথা অনুভূত হতে পারে। আবার অনেক সময় চোখের ব্যথা এতটাই বেড়ে যায় যে আলোর দিকে তাকাতে সমস্যা হয় ৷



রোগ নির্ণয়ঃ
চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী রক্ত পরীক্ষা বিশেষ করে ভাইরাস পৃথকীকরণ, RT-PCR কিংবা সেরোলজির মাধ্যমে এ রোগ শনাক্ত করা যেতে পারে। রোগীর রক্তে ভাইরাসের বিরুদ্ধে তৈরি হওয়া এন্টিবডি দেখে এ রোগ সনাক্ত করা যেতে পারে। এতে অনেক ক্ষেত্রে ২ থেকে ১২ দিন পর্যন্ত সময় লাগতে পারে ৷

চিকিৎসাঃ
* চিকনগুনিয়ার কোনো ভ্যাকসিন এখন পর্যন্ত আবিষ্কৃত হয়নি। তাই জ্বর কমাতে প্যারাসিটামল খেতে হবে।
* প্রচুর পানি, শরবত, ওরস্যালাইন, ডাবের পানি পান করতে হবে।
* পর্যাপ্ত বিশ্রাম নিতে হবে এবং অবশ্যই রোগ সম্পর্কে নিশ্চিত হতে চিকিৎসকের শরণাপন্ন হতে হবে।

প্রতিরোধঃ
মশাবাহিত রোগ হওয়ায় খুব সহজেই চিকনগুনিয়া প্রতিরোধ করা যায়।
* এডিস মশা দিনে কামড়ায়, তাই দিনের বেলা সতর্ক থাকুন। এ সময় ঘুমালে মশারি ব্যবহার করুন।
* মশার বংশ বিস্তার এড়াতে ঘর বা আশপাশে পানি জমিয়ে রাখবেন না।
কারন এডিস মশার ডিম এক বছর পর্যন্তু সক্রিয় থাকে ৷
* যেহেতু এডিস মশা স্থির পানিতে ডিম পাড়ে তাই যেন বাড়ির আশেপাশে পানি জমে না থাকে সেদিকে লক্ষ্য রাখতে হবে ৷

মনে রাখতে হবে,
* একবার চিকনগুনিয়া জ্বর হয়ে গেলে সারা জীবনে আর চিকনগুনিয়া জ্বর হয় না।
* চিকনগুনিয়া জ্বরের চিকিৎসায় কোন এন্টিবায়োটিক প্রয়োজন হয় না।
* জ্বর ভালো হলেও রোগটি অনেক দিন ধরে রোগীকে ভোগায়।
* নারীরা তুলনামূলকভাবে এই রোগে বেশি আক্রান্ত হন।
* চিকনগুনিয়া মরণঘাতী নয় রোগ। তাই ভয়ের কোন কারণ নেই।