তথ্য ও প্রযুক্তির মশাল জ্বলে উঠুক হাতে হাতে

জেনেটিক রোগ কি, এর থেকে বাঁচার উপায়





জেনেটিক রোগ বা বংশগত রোগ হচ্ছে অসংক্রামক রোগ ৷ এই রোগ ছোয়াচে নয় তাই রোগাক্রান্ত ব্যক্তির সাথে বসবাস করলে বা সংস্পর্শে আসলে ছড়ায় না বা নুতন কেউ আক্রান্ত হয় না ৷ সাধারনত যেসব রোগ বংশীয় ভাবে ছড়ায় সেগুলোকে জেনেটিক রোগ বা বংশগত রোগ বলে ৷ অর্থাৎ ইতিপূর্বে বংশে কারো ছিল এবং পরবর্তীতে ছেলে মেয়ে বা নাতি নাতনীর মধ্যে এই রোগ হয়ে থাকে ৷ তবে বংশের সবারই এই রোগ হবে তা নয় ৷ কারন যাদের রোগ হবে না তাদের কেউ রোগের বাহক হতে পারেন আবার কেউ স্বাভাবিক সুস্থ হতে পারেন ৷

এই রোগের কারনঃ
মানব শরীরে অসংখ্য জিন আছে ৷ এই জিন হচ্ছে বংশগতির ধারক ও বাহক। এটি আমাদের শারীরিক ও মানসিক বৈশিষ্ট্য নিয়ন্ত্রণ করে। মা-বাবার সব ধরনের বৈশিষ্ট্য সন্তানের মাধ্যমে এক প্রজন্ম থেকে অন্য প্রজন্মে বহন করে। এই জিনের অস্বাভাবিকতা, মিউটেশন, ডিএনএ বিন্যাসের গোলমালের কারনে সৃষ্টি হয় বিভিন্ন ধরনের বংশগত রোগ বা জেনেটিক রোগ৷


জেনেটিক রোগের তালিকাঃ
জিনের গঠনগত ত্রুটি বা বিন্যাসের অস্বাভাবিকতার কারনে অনেক জেনেটিক রোগ হয়ে থাকে ৷ এসবের মধ্যে উল্লেখযোগ্য কিছু রোগের নাম তুলে ধরা হলো ৷

১. একন ড্রপলেশিয়া
২. এলবিনিজম
৩. বার্ডেটবিডল সিনড্রম
৪. বাইপোলার সিনড্রম
৫. ক্যানাভান ডিজিজ
৬. কালার ব্লাইন্ডনেস
৭. ডাউন্স সিনড্রম
৮. সিসটিক ফাইব্রোসিস
৯. ফ্রাজাইল এক্স সিনড্রম
১০. গ্যালাকটোসেমিয়া
১১. হিমোফিলিয়া
১২. ক্রাব ডিজিজ
১৩. মাসকুলার ডেসট্রফি
১৪. নিউরো ফাইব্রো ম্যাটোসিস
১৫. নুরান সিনড্রম
১৬. ওসটিও জেনেসিস
১৭. পাতাউ সিনড্রম
১৮. সিকেলসেল এনিমিয়া
১৯. টেস্যাক্স ডিজিজ
২০. ট্রিপল এক্স সিনড্রম
২১. টার্নার সিনড্রম
২২. উষার সিনড্রম
২৩. ভন হিপ্পেল লিডেন সিনড্রম
২৪. ওয়ার্ডেন বার্গ সিনড্রম
২৫. উইলসন্স ডিজিজ
২৬. জেরোডার্মা পিগমেনটোসাস
২৭. থ্যালাসেমিয়া ৷

কাদের জেনেটিক টেস্ট দরকার ?
১. যাদের আগের বাচ্চার জেনেটিক রোগ আছে, এমন মায়েদের জেনেটিক টেস্ট দরকার।
২. যেসব মা ৩৫ বছরের পরে বাচ্চা নিতে চান।
৩. যেসব পরিবারের জেনেটিক রোগের ইতিহাস রয়েছে।
৪. বাচ্চা গর্ভকালীন যদি খুবই কম বাড়ে।
৫. আত্মীয়স্বজনের মধ্যে বিবাহিত মেয়েদের(চাচাতো, মামাতো, ফুফাতো ভাইবোন) জেনেটিক টেস্ট দরকার।
৬. যেসব মেয়ের যদি ঘন ঘন বাচ্চা গর্ভপাত হয়ে যায়।

জেনেটিক রোগের জন্য যে টেস্ট করা হয়ঃ
১. ক্রোমোজোমের বিশ্লেষণঃ ক্রোমোজোমের বিশ্লেষণ (অ্যানালাইসিস) করা হয়, সাধারণত গর্ভকালীন বাচ্চার কর্ড থেকে রক্ত, ক্রোরিওনিক ভিলাই, এমনিউটিক তরল উপাদান নিয়ে পিসিআর করার মাধ্যমে।

২. কারিওটাইপিং : আমাদের ক্রোমোজোম সংখ্যা ৪৬। সুতরাং ক্রোমোজোম সংখ্যা বেশি না কম, তা এই টেস্ট দিয়ে বোঝা যাবে।

৩. রিকম্বিনেট ডিএনএ টেকনোলজি

৪. রেস্ট্রিকশন ফ্র্যাগমেন্ট অ্যানালাইসিস

৫. হিমোগ্লোবিন ইলেকট্রোফোরেসিস : থ্যালামেসিয়া আছে কি না এবং তা কোনো টাইপের নির্ণয় করা যাবে।

৬. ক্লটিং ফ্যাক্টর অ্যানালাইসিস : হেমোফাইলিয়া এ এবং বি নির্ণয় করা যায়।

৭. বিভিন্ন হরমোন টেস্ট, যেমন—থাইরয়েড হরমোন, গ্রোথ হরমোন, সেক্স হরমোন লেভেল দিয়ে হরমোনাল রোগগুলো নির্ণয় করা।

জেনেটিক রোগ প্রতিরোধের উপায়ঃ
বংশগত রোগের ক্ষেত্রে মা-বাবা দুজনের জিন থেকে রোগ দেখা দেয় অথবা মা-বাবা কোনো একজনের জিন থেকেও রোগ হতে পারে। ছেলেমেয়ে উভয়ের ক্ষেত্রেই বংশগত সমস্যা হতে পারে। তাই আসুন জেনে নেই জেনেটিক রোগ থেকে বাঁচার কিছু উপায় -

১. বংশগত রোগ প্রতিরোধে চাচাতো, মামাতো, ফুফাতোসহ নিকটাত্মীয়ের কাউকে বিয়ে না করা।

২. মেয়েদের ৩৫ বছরের পরে বাচ্চা না নেওয়া।

৩. বংশগত রোগ হওয়ার আশঙ্কা থাকলে বাচ্চা না নেওয়া।

৪. বিয়ে বা বাচ্চা নেওয়ার আগে জেনেটিক কাউন্সেলিং করলে বংশগত রোগ হতে মুক্ত থাকা যাবে।

৫. আপনার জন্য যেন আপনার সন্তান পরবর্তীকালে বিপদে না পড়ে, সে জন্য আগের প্রস্তুতি গ্রহণ করুন।