তথ্য ও প্রযুক্তির মশাল জ্বলে উঠুক হাতে হাতে

ব্রেইন টিউমার এর লক্ষন ও চিকিৎসা





সারা বিশ্বে প্রতি বছর প্রায় আড়াই লক্ষ মানুষ ব্রেইন টিউমারে আক্রান্ত হয় ৷ আর ক্যান্সার সৃষ্টির কারণ বিবেচনা করলে এই পরিমাণ দ্বাড়ায় সারা বিশ্বে শতকরা ২ ভাগের মত। আবার ১৫ বছরের কম বয়সী শিশুদের ক্ষেত্রে ক্যান্সারের কারণ হিসেবে ব্রেইন টিউমারে অবস্থান দ্বিতীয় ৷ আর ব্রেইন টিউমার সংক্রান্ত ক্যান্সারের চিকিৎসা যথেষ্ট ব্যয়বহুল। তাই আজকের আয়োজন ব্রেইন টিউমারের কারন, লক্ষণ, প্রতিকার ও চিকিৎসা ৷

ব্রেইন টিউমার কি ?
ব্রেইন টিউমার বা ইন্ট্রাক্রানিয়াল নিওপ্লাজম হচ্ছে এমন একটি অবস্থা যখন মানুষের মস্তিষ্কে অস্বাভাবিক কিছু কোষ তৈরি হয়। এতে তীব্র মাথা সহ আরও কিছু সমস্যা অনুভূত হয় ৷ এই টিউমার দুই প্রকারের হয় ৷ যথা-
১) ম্যালিগ্যান্ট বা ক্যান্সার সৃষ্টিকারী টিউমার
২) বেনাইন টিউমার।


ক্যান্সার সৃষ্টিকারী টিউমারকে আবার দুইভাগে ভাগ করা যেতে পারে ৷ যেমন- প্রাথমিক বা প্রাইমারি টিউমার এবং মেটাস্ট্যাসিস বা সেকেন্ডারি টিউমার ৷ এদের মধ্যে প্রাথমিক টিউমার তৈরি হয় মস্তিষ্কের অভ্যন্তরে ৷ অপরদিকে মাধ্যমিক টিউমার শরীরের অপর কোনো অংশ থেকে বিস্তৃত হয়ে মস্তিষ্কে আসে যা চিকিৎসা বিজ্ঞানের ভাষায় ব্রেইন মেটাস্টাসিস টিউমার নামে পরিচিত।

মস্তিষ্কের সকল প্রকারের টিউমারের লক্ষণ মস্তিষ্কের টিউমারের অবস্থান অনুসারে ভিন্ন ভিন্ন হতে পারে ৷ যেমন প্রধান লক্ষণগুলোর মধ্যে রয়েছে -

ক) মাথা ব্যাথা, খিচুনি, দৃষ্টির সমস্যা বা দৃষ্টিবিভ্রম, বমি করা, এবং বিভিন্ন প্রকার মানসিক পরিবর্তন।

খ) মাথা ব্যাথা সাধারণত প্রতিদিন সকাল বেলা তীব্রভাবে অনুভূত হয় এবং বমি করার মাধ্যমে শেষ হয়।

গ) এছাড়াও নির্দিষ্ট কিছু ক্ষেত্রে হাঁটাচলা ও কথা বলা সহ অনুভূতি পাওয়ায় সমস্যা দেখা দিতে পারে।

ঘ) রোগের তীব্রতা বাড়ার সাথে সাথে কারো কারো ক্ষেত্রে জ্ঞান হারানোর মতো ব্যাপারও ঘটতে দেখা যায় ৷

ব্রেইন টিউমারের কারনঃ
মস্তিষ্কের বেশির ভাগ টিউমারের কারণ এখনও অজানা। যে সকল কারণে এই টিউমারের ঝুঁকি বাড়ে তার মধ্যে কিছু কিছু ক্ষেত্রে কতো গুলো ইনহেরিটেড অবস্থার সংশ্লিষ্টটা রয়েছে যা নিউরো ফাইব্রো মেটোসিস নামে পরিচিত।

বিভিন্ন রাসায়নিক পদার্থ, যেমন:ভিনাইল ক্লোরাইড, এপস্টাইন-বার ভাইরাস, এবং আয়োনিত তেজষ্ক্রিয়তার সংস্পর্শ ও এই টিউমারের কারণ হতে পারে।

মোবাইল ফোন ব্যবহারের সাথে মস্তিষ্কের ক্যান্সারের ঝুঁকি নিয়ে উদ্বেগ থাকলেও এর কোনো পরিস্কার প্রমাণ পাওয়া যায়নি।

প্রাপ্ত বয়স্কদের মধ্যে প্রাথমিক টিউমারের যে দুটি প্রকোপ সবচেয়ে বেশি তার মধ্যে রয়েছে মেনিনজিওমা এবং অ্যাস্ট্রোসাইটোমা, যেমন: গ্লিওবাস্টোমা।
আর শিশুদের মধ্যে সবচেয়ে বেশি পরিচিত প্রকারটি হচ্ছে মেডুলোব্লাস্টোমা।

টিউমার নির্ণয়ঃ
মস্তিষ্কের টিউমার নির্ণয়ে যেসব পরীক্ষা-নিরীক্ষা করা হয়ে তার মধ্যে রয়েছে কম্পিউটেড টমোগ্রাফি বা সিটি স্ক্যান, অথবা ম্যাগনেটিক রেজোন্যান্স ইমেজিং বা এমআরআই। পরবর্তীতে বায়োপসির মাধ্যমে তা নিশ্চিত করা হয়।
সাধারণত এসকল পরীক্ষা-নিরীক্ষার ফলাফল অনুসারে টিউমারের মারাত্মকতার মাত্রা নির্ধারণ করা হয়।

চিকিৎসাঃ
১) সাধারণত শল্যচিকিৎসা, রেডিয়েশন থেরাপি এবং কেমোথেরাপির সমন্বয়ে টিউমারের চিকিৎসা হতে পারে।

২) খিচুনির ক্ষেত্রে খিচুনি প্রতিরোধোক অ্যান্টিকনভালস্যান্ট ওষুধের প্রয়োজন হতে পারে।

৩)ডেক্সামিথাসোন ও ফ্রুসেমাইড ধরনের ওষুধ টিউমারের পাশে পানি জমা ঠেকাতে ব্যবহৃত হতে পারে।

৪) কিছু টিউমার ধীরে ধীরে বৃদ্ধি পায় যার ক্ষেত্রে শুধুমাত্র নিয়মিত মনিটরিং এর প্রয়োজন এবং বাড়তি আর কিছু করার প্রয়োজন পড়ে না।

৫) এছাড়াও চিকিৎসার ক্ষেত্রে রোগীর রোগ প্রতিরোধ তন্ত্র (ইমিউনিটি) সম্পর্কে গবেষণা করা প্রয়োজন।

সাধারণত চিকিৎসার ফলাফল টিউমারের প্রকার ও বিস্তৃতির ওপর উল্লেখযোগ্য ভাবে নির্ভর করে। যেমন- গ্লিওবাস্টোমার ক্ষেত্রে চিকিৎসায় খুব ভালো ফলাফল পাওয়া যায় না, কিন্তু মেনিনজিওমার ক্ষেত্রে এই ফলাফল অনেক ভালো।

প্রাথমিক মস্তিষ্কের টিউমারের তুলনায় মেটাস্ট্যাসিস টিউমারের প্রকোপ তুলনামূলক ভাবে বেশি। মেটাস্ট্যাসিস টিউমারের মধ্যে প্রায় অর্ধেক টিউমারের সংক্রমণ হয় ফুসফুসের ক্যান্সারের মাধ্যমে।