সবকিছু সৃষ্টির পেছনে যেমন ইতিহাস বা ঘটনা থাকে তেমনি ইংরেজি সাত দিনের নাম সৃষ্টির পেছনেও রয়েছে বিভিন্ন ধরনের ঘটনা।
নানান সময় নানান ধরনের কাহিনির মধ্য দিয়ে এই দিনগুলোর নামকরণ করা হয়েছে। সম্পূর্ণ অলীক ও ভিত্তিহীন বিষয়ের ওপর নির্মিত ইংরেজি সাতটি দিনের নাম হলো সানডে, মানডে টুয়েসডে, ওয়েডনেসডে, থার্সডে, ফ্রাইডে ও স্যাটারডে।
অযৌক্তিক ঘটনাবলীর মধ্য দিয়ে এই নামগুলোর শুরু হলেও যুগের ক্রমবির্তনের সাথে সাথে ওই নামগুলোরই নতুন সংস্করণ বর্তমানে সমাজে প্রচলিত রয়েছে।
দিনগুলোর মধ্যে প্রথমেই আসে সানডের কথা। প্রাচীনকালে ইউরোপের দক্ষিণাঞ্চলীয় লোকেরা মনে করতো এক জন দেবতা প্রতিদিন ‘সান’ নামের আলো পিণ্ড বা বল আকাশে টেনে তোলে আর নামায়। আলোর এ পিণ্ডকে ল্যাটিনরা বলতো ‘সোলিস’ (Solis), তাই তারা এক দিনের নাম নির্ধারণ করে ‘ডাইচ সোলিস (Dies Solis) যার অর্থ ‘সূর্যের দিন’। উত্তর ইউরোপের লোকেরা একে বলতো ‘সাননানজায়েজ’। ক্রমে ক্রমে সময়ের ব্যবধানে এ ‘সাননানজায়েজ’ (Sunnadaeg) আজকের সানডে (Sunday) রূপে পরিচিতি লাভ করে।
দক্ষিণ ইউরোপের লোকেরা রাতের আকাশে ঝলমলে চাঁদকে (moon) ‘সালভার বল’ মনে করে একে ‘লুনা’ (Luna) বলতো। পরে ল্যাটিন, ভাষায় এই দিনের নাম ‘লুনায়েডাইস’ (Lunaedies) হয়। উত্তর ইউরোপের লোকেরা চাঁদের (moon) নামের সঙ্গে একটি দিনকে বলা শুরু করে ‘মোনানডায়েচ’ (Monandaeg)। যা এখন মানডে (monday) নামে পরিচিত।
আগের দিনে দক্ষিণ ইউরোপের লোকদের বিশ্বাস ছিল ‘টিউ’ (Tiw) নামের একজন রণদেবতা আছেন। তিনি পাহাড়ে থাকেন। এই দেবতাকে যারা পূজো দেয় তাদেরকে‘টিউ’ সাহায্য করেন। কোনো যোদ্ধা যুদ্ধে মৃত্যুবরণ করলে দেবতা ‘টিউ’ সাহায্য করেন। তারপর একদল সুন্দরী নারীকর্মী সঙ্গে করে ওই মৃত যোদ্ধাকে এক মনোরম জায়গায় নিয়ে যান। লোকেরা এই ‘টিউ’ দেবতার সম্মানে একদিনের নাম করে ‘টিউয়েজডায়েচ’ (Tiwesdaeg)। যা ইংরেজিতে আজকের টুয়েসডে (Tuesday)।
উত্তর ইউরোপের লোকেরা বিশ্বাস করতো ‘উডেন’ (wden) নামের দেবতা সব দেবতার চেয়ে শক্তিশালী। দেবতা উডেন জ্ঞানের সন্ধ্যানে সর্বত্র ঘুরে বেড়ান। তার মাথায় আছে ঢেউ খেলানো বিরাট ‘হ্যাট’, যার আড়ালে একটি চোখ ঢেকে থাকতো। উডেনের দু’কাধে বসে থাকে দুটি কালো পাখি। তারা ছিল আসলে গুপ্তরে। রাতের বেলা পাখি দুটো পৃথিবীতে নেমে আসে আর সকালে উডেনের কাছে ফিরে গিয়ে রাতে কি কি দেখেছে বিস্তারিত বর্ণনা করে। এভাবেই পৃথিবীতে তখন কি ঘটেছে না ঘটেছে উডেন তা স্বর্গে বসেই জেনে নিতেন। এ দেবতার স্মরণে লোকেরা একটি দিনের নাম দেয় ‘উডেনেসডায়েচ’ (Wednesdaeg)। যাকে আমরা এখন ‘ওয়েডনেসডে’ (Wednesday) নামে চিনি।
অনেকদিন আগে মানুষ বিদ্যুত্ চমকানো ও বজ্রপাতের কারণ সম্পর্কে কিছুই জানতো না। কিন্তু এসব তারা গভীরভাবে পর্যবেক্ষণ করতো। তাদের মধ্যে বিশ্বাস জন্মালো এসব ঘটে একজন দেবতার দ্বারা। উত্তর ইউরোপের লোকেরা এ দেবতার নাম দেয় ‘থর’ (Tour)। তারা মনে করতো দেবতা থর যখন খুব রেগে যান তখন আকাশে বিশাল হাতুড়ি ছুঁড়ে মারেন যা আগুন বা আলো হয়ে দেখা যায়। হাতুড়িটা ছুঁড়ে মেরে দেবতা থর তার দুটি ছাগলের টানা গাড়িতে গিয়ে বসেন। গাড়িটি আবার চলতে থাকে। তখন এর চাকার যে শব্দ হয় তা-ই মেঘের গর্জন অর্থাত্ তখনকার লোকদের ধারণা ছিল আজকের যে মেঘের গর্জন তা ছিল থর দেবতার গাড়ির চাকার। যাই হোক, তারা দেবতা থর-এর সম্মানে একটি দিনের নাম রাখে ‘থরেসডায়েচ’ (Thoresdaeg)। সেই থেকেই উত্পত্তি হয় আজকের থার্সডে (Thursday)।
প্রাচীন লোকদের ধারণা ছিল ‘ওডিন’ (Odin) নামের সবচেয়ে শক্তিশালী দেবতার স্ত্রী ‘ফ্রিগ’ (Frigg) খুব ভদ্র ও সুন্দরী দেবী। এই দেবী দেবতা ওডিনের পাশে বসে সমস্ত পৃথিবী পর্যবেক্ষণ করেন। ফ্রিগ দেবীই সব দেব-দেবতার প্রেম পরিণয়সহ সমস্ত প্রকৃতি নিয়ন্ত্রণ করেন। সুতরাং লোকজন তার সম্মানে একটি দিনের নাম ঠিক করে ‘ফ্রিগেডোয়েজ’ (Frigdaeg)। আর এ ফ্রিগডায়েজ থেকে জন্ম নিলো ‘ফ্রাই ডে’ (Friday)।
অনেক দিন আগে রোমান শাসনামলে লোকদের বিশ্বাস ছিল‘সাটার্ন’ নামের দেবতা তাদের চাষাবাদ দেখাশোনা করেন। আরও বিশ্বাস ছিল এ দেবতাই রোদ-বৃষ্টি, ঝড়-তুফান নিয়ন্ত্রণ করেন। কাজেই সার্টন দেবতাকে খুশি করার জন এলাকার লোকজন একটি গ্রহের নামের পাশাপাশি একটি দিনের নামও ঠিক করে ‘সার্টনির্ডায়েজ’ (Satuidaeg)। সেদিনের সেই নামটিই আজকের স্যাটারডে (Satuarday)।