শশার অনেক গুণ রয়েছে। আমাদের দেহে যেসব ভিটামিনের দরকার হয়, তার বেশির ভাগই শশার মধ্যে বিদ্যমান। সারা বিশ্বে আবাদ হওয়ার দিক থেকে ৪ নম্বরে রয়েছে যে সবজিটি সেটি হলো শসা। রূপচর্চা ও মেদ নিয়ন্ত্রণ সহ নানান উপকারিতা আছে এই সহজলভ্য সবজির।এর মধ্যে ১৪টি গুরুত্বপূর্ণ দিক তুলে ধরেছেন খাদ্য বিশেষজ্ঞরা। আসুন জেনে নেই শশার নানান উপকারিতাঃ
দেহের পানিশূন্যতা দূর করে-
ধরুন আপনি এমন কোথাও আছেন, যেখানে হাতের কাছে পানি নেই, কিন্তু শসা আছে। বড়সড় একটা শসা চিবিয়ে খেয়ে নিন। পিপাসা মিটে যাবে। আপনি হয়ে উঠবেন চনমনে। কারণ, শশার ৯০ শতাংশই পানি।
দেহের ভেতর-বাইরের তাপ শোষক-
কখনো কখনো আপনি শরীরের ভেতর-বাইরে প্রচণ্ড উত্তাপ অনুভব করেন। দেহে জ্বালাপোড়া শুরু হয়। এ অবস্থায় একটি শসা খেয়ে নিন। এছাড়া সূর্যের তাপে ত্বকে জ্বালা অনুভব করলে শসা কেটে ত্বকে ঘষে নিন। নিশ্চিত ফল পাবেন।
বিষাক্ততা দূর করে-
শশার মধ্যে যে পানি থাকে তা আমাদের দেহের বর্জ্য ও বিষাক্ত পদার্থ অপসারণে অনেকটা অদৃশ্য ঝাটার মতো কাজ করে। নিয়মিত শসা খাওয়ায় কিডনিতে সৃষ্ট পাথরও গলে যায়।
প্রাত্যহিক ভিটামিনের শূন্যতা পূরণ করে-
প্রতিদিন আমাদের দেহে যেসব ভিটামিনের দরকার হয়, তার বেশির ভাগই শশার মধ্যে বিদ্যমান। ভিটামিন এ, বি ও সি আমাদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা ও শক্তি বাড়ায়। সবুজ শাক ও গাজরের সঙ্গে শসা পিষে রস করে খেলে এই তিন ধরনের ভিটামিনের ঘাটতি পূরণ হবে।
ত্বক বান্ধব খনিজের সরবরাহকারী-
শসায় উচ্চমাত্রায় পটাশিয়াম, ম্যাগনেশিয়াম ও সিলিকন আছে, যা ত্বকের পরিচর্যায় বিশেষ ভূমিকা রাখে। এ জন্য ত্বকের পরিচর্যায় গোসলের সময় শসা ব্যবহার করা হয়।
হজম ও ওজনহ্রাসে সহায়ক-
শসায় উচ্চমাত্রায় পানি ও নিম্নমাত্রার ক্যালরিযুক্ত উপাদান রয়েছে। ফলে যাঁরা দেহের ওজন কমাতে চান, তাঁদের জন্য শসা আদর্শ টনিক হিসেবে কাজ করবে। যাঁরা ওজন কমাতে চান, তাঁরা স্যুপ ও সালাদে বেশি বেশি শসা ব্যবহার করবেন। কাঁচা শসা চিবিয়ে খেলে তা হজমে বড় ধরনের ভূমিকা রাখে। নিয়মিত শসা খেলে দীর্ঘমেয়াদি কোষ্ঠ-কাঠিন্য দূর হয়।
চোখের জ্যোতি বাড়ায়-
সৌন্দর্যচর্চার অংশ হিসেবে অনেকে শসা গোল করে কেটে চোখের পাতায় বসিয়ে রাখেন।এতে চোখের পাতায় জমে থাকা ময়লা যেমন অপসারিত হয়, তেমনি চোখের জ্যোতি বাড়াতেও কাজ করে।চোখের প্রদাহপ্রতিরোধক উপাদান প্রচুর পরিমাণে থাকায় ছানি পড়া ঠেকাতেও এটি কাজ করে।
ক্যানসার প্রতিরোধে কাজ করে-
শসায় সিকোইসোলারিসিরেসিনোল, ল্যারিসিরেসিনোল ও পিনোরেসিনোল—এ তিনটি আয়ুর্বেদিক উপাদান আছে। জরায়ু, স্তন ও মূত্রগ্রন্থিসহ বিভিন্ন স্থানে ক্যানসার হওয়ার ঝুঁকি কমানোর সঙ্গে এই তিন উপাদানের জোরালো সম্পর্ক রয়েছে।
ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে ভূমিকা রাখে-
ডায়াবেটিস থেকে মুক্তি দেয়, কোলস্টেরল কমায় ও রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রাখে।
মুখ পরিষ্কার রাখে-
দুর্গন্ধযুক্ত সংক্রমণে আক্রান্ত মাড়ির চিকিৎসায় শসা দারুণ কাজ করে। গোল করে কাটা এক স্লাইস শসা জিহ্বার ওপরে রেখে সেটি টাকরার সঙ্গে চাপ দিয়ে আধা মিনিট রাখুন। শসার সাইটোকেমিক্যাল এর মধ্যে বিশেষ বিক্রিয়া ঘটিয়ে আপনার মুখের জীবাণু ধ্বংস করবে। সজীব হয়ে উঠবে আপনার নিঃশ্বাস।
চুল ও নখ সতেজ করে-
শসার মধ্যে যে খনিজ সিলিকা থাকে তা আমাদের চুল ও নখকে সতেজ ও শক্তিশালী করে তোলে। এ ছাড়া শসার সালফার ও সিলিকা চুলের বৃদ্ধিতে সহায়তা করে।
গেঁটেবাত থেকে মুক্তি-
শসায় প্রচুর পরিমাণে সিলিকা আছে। গাজরের রসের সঙ্গে শসার রস মিশিয়ে খেলে দেহের ইউরিক অ্যাসিডের মাত্রা নেমে আসে। এতে গেঁটেবাতের ব্যথা থেকে মুক্তি পাওয়া যায়।
মাথাধরা থেকে নিষ্কৃতি-
ভোরে ঘুম থেকে ওঠার পর অনেকের মাথা ধরে। শরীর ম্যাজম্যাজ করে। শসায় প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন বি ও সুগার আছে। তাই ঘুমাতে যাওয়ার আগে কয়েক স্লাইস শসা খেয়ে নিলে ভোরে ঘুম থেকে ওঠার পর এ সমস্যা থাকবে না।
কিডনি সুস্থ রাখে-
শরীরের ইউরিক অ্যাসিডের মাত্রা ঠিক রাখে শসা। এতে কিডনি থাকে সুস্থ ও সতেজ।
শসাকে যেমন পুষ্টিকর সবজি হিসেবে খাওয়া হয়, তেমনি ব্যবহার করা হয় রোগ নিরাময়ে।
পুষ্টি উপাদান-
শসা ভিটামিন এবং মিনারেলেস পরিপূর্ণ একটি সবজি। এর ৯৬ শতাংশ পানি। শসা ভিটামিন-কে, ভিটামিন-সি, ভিটামিন-এ, ফলিক এসিড, পটাশিয়াম এবং ম্যাঙ্গানিজের উত্তম উৎস। এ ছাড়া রিবোফ্লাবিন, প্যান্টোথেনিক এসিড, ক্যালসিয়াম, ম্যাগনেসিয়াম, ফসফরাস, সালফার, সিলিকা এবং ভিটামিন বি-৬ আছে বেশি পরিমাণে। শসা থেকে খাদ্য আঁশ পাওয়া যায়। এতে আরো রয়েছে ফাইটোনিউট্রিয়েন্টস, কিউকারবিটাকিন্স, লিগনান্স এবং ফ্লাভনয়েডস।